বজ্রপাতের সময় করনীয়, বজ্রপাতের সময় কোথায় থাকা উচিত?

এই পৃথিবীতে প্রতি মিনিটে ৮০ লক্ষ বজ্রপাত সৃষ্টি হয়। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ দূর্যোগ হয় তার চেয়ে বেশি পরিমান অর্থাৎ ২৬ শতাংশ হয় মে মাসে।ঋতু ভিত্তিক বিন্যাসেও বজ্রপাতের ধরনের পার্থক্য রয়েছে। মার্চ থেকে মে মাসে প্রায় ৫৯ শতাংশ এবং মৌসুমি বায়ু আসার সময় অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ বজ্রপাত হয়। তবে মোট বজ্রপাতের প্রায় ৭০ শতাংশ হয় এপ্রিল থেকে জুনে মাসে। 

২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাত কে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। গবেশনা করে দেখা যায় ২৪ ঘন্টার হিসেবে বেশি বজ্রপাত হয় রা ৮ থেকে ১০ টার মধ্যে ১২ শতাংশ। আর সন্ধে থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ২৮.৫ শতাংশ। গবেশনায় বলছে ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে মোট প্রায় ১৩২০জনের ও বেশি বজ্রপাতে মারা গেছে।বজ্রপাতে দেশে প্রান হানি প্রতি ১০ লক্ষের মধ্যে ১.৭ জন।

বজ্রপাতের সময় আমাদের যা যা করনিয়ঃ

প্রাকৃতিক দুর্যোগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বজ্রপাত। বজ্রপাতের সময় আমরা কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারি চলুন জেনে নেই।

১। দালান বা পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নিন।ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্হাতেই ফাকা যায়গা বা উচু স্হানে অবস্হান করা যাবে না

২। বজ্রপাত সাধারণত ৩০-৩৫ মিনিট পর্যন্ত চলতে থাকে।এই সময়ে আমরা ঘরে অবস্হান করতে হবে।খুব জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবার বা বার্মিস স্যান্ডেল পরিধান করুন খালি পায়ে বের হওয়া জাবে না।এটা আপনাকে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষিত রাখবে।

৩। বজ্রপাতের সময় যদি খোলা অবস্হানে আটকে জান যেমন ধান ক্ষেত বা ফাকা মাঠ। এই অবস্হাতে থাকলে তাহলে পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পরতে হবে।

৪। বজ্রপাতের সময় উচু গাছপালা যেমন তাল গাছ বট গাছ ইত্যাদি এবং বিদ্যুৎ লাইন থেকে দুরে অবস্হন করতে হবে। এগুলোতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৫। বজ্রপাতের সময় শিশুদের সব খেলাধুলা থেকে বিরত থাকতে হবে।এবং ঘরে অবস্হান করতে হবে।

৬। বজ্রপাতের সময় জানালার পাশাপাশি থাকবেন না।জালানা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের মধ্যে থাকুন।

৭। ধাতব বস্তুু স্পর্শ করবেন না। যেমন ধাতব কল,শিড়ির রেলিং,পাইপ এমনকি টেলিফোন ও স্পর্শ করা যাবে না।

৮। বজ্রপাতের সময় নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না।যদি এমন অবস্হা সৃষ্টি হয়ে যায় তবে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করতে হবে।

৯। বজ্রপাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রগুলো বন্ধ করতে হবে।যেমন টিভি,ফ্রিজ,কম্পিউটার, ল্যাপটপ।এবং এগুলো স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

১০। বজ্রপাতের সময় পুকুর অথবা জলাবদ্ধ স্হান ত্যাগ করতে হবে অতি দ্রুত। পানি বিদ্যুৎ পরিবাহি।

১১। পরস্পর থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখতে হবে।কয়েনজন মিলে খোলা স্হানে যদি বজ্রপাত শুরু হয় তাহলে সবাই ৫০-১০০ ফিট দুরত্ব বজায় রাখুন।

১২। যদি কেও গড়ির ভেতর অবস্হান করেন তাহলে গাড়ির ধাতব অংশ যেন শরিরের সাথে স্পর্শ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

১৩। বজ্রপাতের লক্ষন জানতে হবে।আপনার উপর বা আশে পাশে বজ্রপাত হবার ঠিক আগ মুহুর্তে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে।অথবা ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভুত হবে।এসময় আশে পাশে ধাতব পদার্থ গুলো কাপতে শুরু করবে।এরকম কিছু লক্ষ করলে দ্রুত বজ্রপাত হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

১৪। আপনার বাড়িকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহন করুন।

১৫। বজ্রপাতের সময় আশে পাশের খবর রাখতে হবে।কেও যদি বজ্রপাতে আহত হয় তাহলে তাকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো চিকিৎসা করতে হবে।প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্হা করতে হবে।

বজ্রপাতে সুরক্ষিত থাকতে হলে উপরের কৌশল গুলো অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *