বাংলাদেশে গমের চাহিদা ২০২২। রাশিয়া থেকে সরকারি ভাবে গম আমদানি চুক্তি চূড়ান্ত

রাশিয়া হতে সরকারি ভাবে গম আমদানির কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঐ দেশ থেকে সাড়ে তিন লাখ টন গম ক্রয় করবে বাংলাদেশ। আগামী কিছু দিনের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হবে।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মস্কো থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান মুঠোফোনে এ তথ্য জানান।

সরকারি ভাবে গম এবং সার আমদানি

এর পূর্বে দুপুরে ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দার মান্টিটস্কি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, রাশিয়া থেকে সরকারি ভাবে গম এবং সার আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে কথাবার্তা চলছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সাড়ে তিন লাখ টন গম এবং এক লাখ টনের বেশি পটাশ সার দেওয়া হবে।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে রাশিয়ার কোনো দায় নেই

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট খাদ্যসংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, বৈশ্বিক খাদ্যসংকট বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। যার কারণে ইউক্রেন হতে খাদ্য জোগান গতানুগতিক রাখতে রাশিয়া উদ্যোগ গ্রহণ  করেছে। তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে রাশিয়ার কোনো দায় নেই। কেননা, রাশিয়া কোনো ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাই এই সংকটের জন্য আপনারা রাশিয়ার ওপর দোষ চাপাবেন না।

খাদ্য অধিদপ্তর এবং প্রোডিনটর্গের মহাপরিচালক চুক্তিতে স্বাক্ষর

কূটনৈতিক মারফতে জানা গেছে, গতকাল মস্কোয় রাশিয়া থেকে গম এবং সার ক্রয়ের বিষয়ে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মাঝে কথোপকথন হয়েছে। মূলত পণ্যের মূল্য এবং প্রক্রিয়ার বিষয়ে তারা কথোপকথন করেন। ভার্চুয়াল কথোপকথনে খাদ্যশস্য রপ্তানিবিষয়ক রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা প্রোডিনটর্গ এবং রাশিয়ার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে রাষ্ট্রদূতের সম্মেলনে খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন। খাদ্য অধিদপ্তর এবং প্রোডিনটর্গের মহাপরিচালক চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।

জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান জানান, রাশিয়ার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বুধবারের সম্মেলনে গম ক্রয়ের বিষয়ে ফলপ্রসূ কথোপকথন হয়েছে। আগামী কিছু দিনের মাঝে চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ঋণপত্র খোলা হতে ৪৫ দিনের মাঝে বাংলাদেশ গম আমদানি করবে। তিনি বলেন, রুশ কর্মকর্তাদের সাথে বুধবারের সম্মেলনে সার আমদানির বিষয়েও কথোপকথনে সাফল্য হয়েছে। খুব দ্রুতই এক লাখ টনের বেশি সার আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করে থাকে

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমন শুরুর পর রাশিয়া হতে পণ্য আমদানি স্থগিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর ব্যাংকিং লেনদেনসহ নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যার কারনে ঋণপত্র খোলা, পণ্যের চালানের নিশ্চয়তা পাওয়া বিষয়গুলো ঝুলে ছিল। এর পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার কারণে কেনাবেচার উপায় নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলে এখনো বিপদমুক্ত নয়। ইদানীং রাশিয়ার কৃষি এবং খাদ্যপণ্য আমদানি হতে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে।

বাংলাদেশের গম আমদানির অন্যতম উৎস ছিল রাশিয়া এবং ইউক্রেন। দেশের মোট চাহিদার কমপক্ষে ২৫ শতাংশ গম আমদানি হতো এই দুই দেশ হতে।

বাংলাদেশের কাছে অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি পরিশোধিত তেল বিক্রয়ের পরিকল্পনা করছে রাশিয়া

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত গতকাল বিকেলে রাশিয়া দূতাবাস উপন্যস্ত এক গোলটেবিল সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, বাংলাদেশের কাছে অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি পরিশোধিত তেল বিক্রয়ের পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। এ বিষয়ে দুই পক্ষের মাঝে কথোপকথন চলছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ ছয় মাস পূর্তিতে দূতাবাস ওই কথোপকথনের আয়োজন করে।

বিএসটিআই অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সালফার রয়েছে

বাংলাদেশের কাছে বিক্রয়ের জন্য রাশিয়া ডিজেলের যে নমুনা দিয়েছে, তাতে বিএসটিআই অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সালফার রয়েছে। রাশিয়ার ডিজেল নোংরা জ্বালানি বিধায় বাংলাদেশকে অল্প মূল্যে বিক্রয়ের পরিকল্পনা করছে কি না, গোলটেবিল কথোপকথনের পর এক প্রশ্নের জবাবে আলেক্সান্দার মান্টিটস্কি জানান, জ্বালানি তেল বিক্রয়ের বিষয়ে দুই দেশের মাঝে কথোপকথন চলমান রয়েছে। কিন্তু বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না।

বাংলাদেশেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে

ব্যবসা–বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের স্বকীয় অর্থে লেনদেনের বিষয়ে জিজ্ঞেসা করলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জানান, আর্থিক কারবারের বিষয়ে দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাঝে  কথোপকথন চলছে। এ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে রাশিয়ার জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গাজপ্রমের কোনো আগ্রহ আছে কি না, এ বিষয়ে জিজ্ঞেসা করলে তিনি জানান এ বিষয়ে বাংলাদেশেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।

সূত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *