গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ইউরোপে ২০২২ । মূল্য নিদিষ্ট করার সিদ্ধান্ত ৭ দেশের

বিগত বেশ কিছুদিন যাবত ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে যেন এক ধরনের লুকোচুরি খেলছে রাশিয়া। নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে একবার ইউরোপে গ্যাস জোগান হ্রাস করে তো আরেকবার বন্ধ করে, আবার পুনরায় চালু করে। তবে শেষ পর্যন্ত রাশিয়া নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে গ্যাস জোগান বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইউরোপকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আরও বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেই দেখা যাচ্ছে।

ইউরোপে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশ

রাশিয়া গ্যাস জোগান বন্ধ করে দেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপে গ্যাসের মূল্য বেড়ে গেছে। সোমবার সকালে বাজারে কেনা-বেচা শুরু হওয়ার পরই ইউরোপে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশ । খবর বিবিসির।

গত শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন চালু হওয়ার কথা থাকলেও রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, লাইনে লিকেজ দেখা দিয়েছে , তাই তারা গ্যাস সরবরাহ চালু করতে পারছে না।

ইউরোপের দোষারোপ করছে, গ্যাস জোগান চালু এবং বন্ধ করার ভিতর দিয়ে রাশিয়া ইউরোপের দেশগুলোকে ব্ল্যাকমেইল করছে, যদিও মস্কো বরাবরই এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। মস্কোর মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের দেশ এবং বেশ কিছু কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কারণেই গ্যাস পাম্প করা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যও আছে। অন্য কোনো কারণে গ্যাস জোগান দেওয়া নিয়ে সমস্যা হয়নি।’

গ্যাসের খুচরা বাজার খুবই বেপরোয়া

বর্তমানে গ্যাসের খুচরা বাজার খুবই বেপরোয়া। গত সপ্তাহে জার্মানি যখন প্রচার করলো, তাদের মজুত ভান্ডারগুলো প্রত্যাশার তুলনায় শীঘ্রই ভরে যাচ্ছে, তখন গ্যাসের মূল্য হ্রাস পেতে শুরু করে।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে  প্রায় ৩৫ শতাংশ

তবে যুক্তরাজ্য নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের ওপর আস্থাশীল না হলেও নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে ইউরোপের খুচরা বাজারে গ্যাসের মূল্য অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার যুক্তরাজ্যে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে  প্রায় ৩৫ শতাংশ।

অন্যদিকে নর্ড স্ট্রিম-১ দিয়ে পূর্বপরিকল্পনামতো জার্মানিতে গ্যাস জোগান না করার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই রাশিয়ার গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ইউক্রেনের ভিতর দিয়ে ইউরোপে ৪২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ঘনমিটার (এমসিএম) প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। শুক্রবার সুডজা এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়ে গ্যাসপ্রবাহ ছিল ৪১ দশমিক ৩ এমসিএম।

শনিবার এই পয়েন্ট দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে , যদিও তা নর্ড স্ট্রিম বন্ধ করে দেওয়ার লোকসান পোষানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এর পূর্বে মেরামতের  জন্য তিন দিন বন্ধ ছিল নর্ড স্ট্রিম-১। শনিবার হতে এ পাইপলাইনে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ আরম্ভ করার কথা থাকলেও তা আরম্ভ করতে পারেনি রাশিয়া।

গ্যাজপ্রম জানিয়েছে, মেরামত কাজ করার সময় পাইপলাইনের একটি টারবাইন লিকেজ হয়ে তা হতে তেল চুয়ে পড়ার কারণে গ্যাস সরবরাহ আরম্ভ করা যায়নি। এ পাইপলাইন কবে নাগাদ ঠিক হবে, তা এখনো জানা যায়নি। যদিও জার্মানি ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান সিমেন্স জানিয়েছে, এটা কোনো সমস্যা নয়। কারণ, এ ধরনের লিকেজ থাকলেও গ্যাস জোগানে তেমন কোন সমস্যা হয় না। এটা দৈনন্দিন মেরামতের বিষয়।’

এক ইউরোর মান বর্তমানে শূন্য দশমিক ৯৯ ডলারের নিচে

এদিকে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ঘোষণায় ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর দরপতন হয়েছে। এক ইউরোর মান বর্তমানে শূন্য দশমিক ৯৯ ডলারের নিচে চলে এসেছে। ২০০২ সালের পর এটিই ইউরোর সর্বনিম্ন দর। সামগ্রিকভাবে ডলার সূচকের মানও ঊর্ধ্বমুখী। ব্রিটিশ মুদ্রার পাউন্ডের দরপতন হচ্ছে।

এদিকে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে রাশিয়া যেন যুদ্ধ চালানোর জন্য অধিক অর্থ জোগাড় করতে না পারে, সে জন্য বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি–৭ রাশিয়ার গ্যাসের মূল্য বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে পরিস্থিতির আরও খারাপ হওয়ার শংকা রয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *